Monday 26 June 2017

ঈদোৎসবের ভিআইপি

ঈদের সকাল।
আগের দিনই নেমন্তন্ন চলে এসেছে শাজাহানদার বাড়ি থেকে ।
শাজাহানদা আমার গাড়িচালক। তবে সত্যি কথা বলতে কি, ভদ্রলোক তার সাথে সাথে আমার গার্জেনগিরিও করে থাকেন সময়ে অসময়ে। আমাকে ভাই বলে ডাকে, আমার মা কেও মা বলেই ডাকে ।

তো সেই শাজাহানদার জীবনচরিত লিখতে বসলে মোটামুটি হলিউড না হলেও একটা বলিউডের সিনেমা তো বনেই যাবে।

খুব সংক্ষেপে সারি। ভদ্রলোক মুম্বতে গিয়ে হিরো হতে গিয়ে ফিরে এসেছিল টাকার অভাবে, তারপর সিপিএম এর গুন্ডা হয়ে বেশ কিছু খুনটুন করে জেল খেটে বেড়িয়ে এসে কিছুদিন পুলিশের সোর্স হয়ে কাজ করে অবশেষে এখন আমার গাড়িচালক প্লাস গার্জেন।

তো আগে যাই হোক, বিগত ৫ বছর ধরে শাজাহানদাকে দেখছি। প্রচন্ড ইমানদারি নিয়ে কাজ করা, সব ধর্ম মেনে চলা এক মানুষ। সত‍্যিকারের সেক্যুলার লোক, সেক্যুলারিজমের  মুখোশ পড়া ভন্ড দেখনদারীওয়ালা নয়। শাজাহানদার  সব ধর্ম মেনে চলার গল্পটা অন্য আরেকদিন বলবো, যথাসময়ে । আপাতত কালকের ঘটনাটাই বলি।

ঈদের নেমন্তন্ন যখন, তখন সাদা পাঞ্জাবি পড়ে যাওয়াটাই রেয়াজ সর্বত্র। কিন্তু আমার আবার রেয়াজ না মানাই অভ্যেস। তো সেই অভ্যেস মতই বেশ একটা লাল নীল সবুজ হলুদয়ালা রং বেরং এর টি-শার্ট পড়ে গেলাম শাজাহানদার বাড়ির লাগোয়া মসজিদের সামনে।

আমার পোশাক দেখে ওখানকার অনেকেই বেশ বাঁকা চোখে তাকাচ্ছে আমার দিকে, আর আমি বেশ নির্বিকার চিত্তে ঢিনচ্যাক পূজা আর হানি সিং এর গান শুনে, তার তুলনামূলক শাস্ত্রীয় বিশ্লেষণ করে সময় অতিবাহিত করছি। হঠাৎ  দেখি সামনে বেশ সাজো সাজো রব উঠেছে। তাকিয়ে দেখি একটা বেশ বড় কনভয় এসে দাড়িয়েছে। ভেতর থেকে নেমে এসেছেন জনৈক দাপুটে মন্ত্রী। সাথে বেশ কিছু ষন্ডামন্ডা দেহরক্ষী। তা তেনারা এসেই আমাদের মত আম জনতা কে ছত্রভঙ্গ করতে লেগে গেলেন।

আমিও সরে দাড়ালাম। স্বাভাবিক ভাবেই মসজিদের ভেতর থেকে দাপুটে মন্ত্রীবর কে অভ্যর্থনা জানাতে লোকজন বেড়িয়ে আসছে, হঠাৎ দেখি শাজাহানদাও বেড়িয়ে এল।

তা মন্ত্রীবাবু বেশ শাহরুখ খানের কায়দায় সবার সাথে হাত মিলিয়ে জাপ্টাজাপ্টি করছেন, কিন্তু শাজাহানদা দেখলাম কোনো দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ওনার সামনে দিয়েই বেড়িয়ে এল।

মন্ত্রীমশাই একটু অবাকই হলেন মনে হল। ওনার পাশে আবার ছিল আমাদের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি তো বেশ রাগত ভাবেই পাশের এক বৃদ্ধ কে জিজ্ঞেস করলেন যে কে এই বেয়াদব লোক? বৃদ্ধের উত্তর শোনার আগেই অবশ্য শাজাহানদা আমায় পাকড়াও করে ফেলেছে। আর তারপর প্রায় চ্যাংদোলা করে বস্তির মধ্যে ঢুকিয়ে তার বাড়ি নিয়ে চলে গেছে।

একটু পরে মন্ত্রী মশাইও তার সিপাহী দের নিয়ে বস্তিতে ঢুকলেন।

সেখানেও সবাইকে দেখে তিনি একগাল হাসি হেসে 'ঈদ মোবারক', 'সালাম আলেইকুম' করে অনেককেই জড়িয়ে ধরে হামি টামি খেলেন।
একটু পরে শাজাহানদার বাড়ির সামনে এসেও অমায়িক হাসির সাথে কুশল বিনিময় হল। হঠাৎ ওনার চোখ গেল আমার দিকে।

মুশকিল হল এই মন্ত্রীমশাইকে আমি পারিবারিক সূত্রে ভালই চিনি আর উনিও আমায় অল্পসল্প চেনেন । তাতে অবশ‍্য কোনই অসুবিধে নেই।

অসুবিধেটা‌ শুধু এই যে ওনার সামনেই শাজাহানদার বাড়ির লোকজন ওনার পরিচিত একজন আম আদমিকে সেমাই পায়েস পরিবেশন করলেন আর মন্ত্রীমশাই বা সেই কাউন্সিলর মশাইকে দেখে মাথা হেলিয়ে শুকনো অভিবাদন জানালেন।

বিশ্বাস করবেন না, সেই সময়ে কেউ যদি আমায় নিজের নাম জিজ্ঞেস করত, তো নির্ঘাত নরেন্দ্র মোদি বা প্রণব মুখার্জি বলতাম হয়ত, নিজেকে এরকম ভিভিআইপি কোন দিনও মনে হয়নি আগে।

আর শুধু যে শাজাহানদার বাড়ির লোকজন আমায় এত খাতিরদারি করল তাও নয়, চারপাশের আরো কত না চেনা, না জানা মানুষেরা এসে আমার সাথে হরেক কিসিমের গল্প করে গেল।
সেমাই তো খেলামি, সাথে ২ রকমের সরবত, বিরিয়ানি , মাছ , মাংস আরো কত কি !!!

ধর্মীয় বিভাজন, মৌলবাদ ইত‍্যাদি ইত‍্যাদি যা দেখেছি সবই ভার্চুয়াল ফেবুর কল্যাণে, কিন্তু বাস্তবে ঈদের দিনে একটি মুসলমান বস্তিতে গিয়ে অনেকটা ভালবাসাই পেলাম, সাথে আশীর্বাদও।

এও দেখলাম যে সংখ্যালঘু তোষণকারী কোন এক দলের কোন এক দাপুটে মন্ত্রীর চাইতে কিন্তু অনেক বেশি আন্তরিকতা বরাদ্দ ছিল একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন অজানা, অচেনা হিন্দু ছেলের প্রতি।

জয় হিন্দ ।

Wednesday 21 June 2017

#মেয়ে চাই#

“আমি মেয়ে চাই !”
কথা হচ্ছিল রনির সাথে। রনি আমার অফিসের কলিগ।  সবেতেই সে একদম যাকে বলে স্টার।  প্রোগ্রামিংই হোক, ক্লায়েন্টকে টুপি পরিয়ে কাজ আদায় করাই হোক, বস কে তেল মারাতেই হোক, জুনিয়রদের থেকে তেল খাওয়াই হোক বা মহিলাদের মন জয় করাই হোক সবেতেই সে এক নম্বর।
তবে যেটা সবচাইতে ও ভাল করে, তা হল গল্প বলা।  ওর গল্পের গরু গাছে নয়, একদম মহাকাশে উঠে যায়।  সে যাক, কিন্তু ব্যাপার হল যে সেই রনি এবারে বিবাহিত জীবনেও ছক্কা হাকিয়েছে, মানে ওই আর কি, বাবা হতে চলেছে।
সেই প্রসংগেই একদিন সেক্টর ফাইভের একটা রেস্তোরাতে বসে কথা হচ্ছিল রনির সাথে।  তখনি ওকে জিজ্ঞেস করলাম - “কিরে কি চাস ? ছেলে না মেয়ে? ”
আজকাল সবাই এতে ডিপ্লোম্যাটিক উত্তর দেয় - “যা হবে, তাই ভাল” ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু আমাদের রনির পেটে তখন তিন পেগ বিয়ার ঢুকে আছে , জানি এই সময় ডিপ্লোমেসি বেরোবে না মুখ থেকে ।  ঠিক তাই হল। 
সহজ সরল স্বীকারোক্তি বেরোল - “আমি মেয়ে চাই !”
তা বেশ ভাল।  আমিও এককালে মেয়ে সন্তান ছেয়েছিলাম, পাইনি, তাই এখনো ইয়ে মানে হাল ছাড়িনি ।  যাই হোক, সে কথা পরে হবে, আপাতত রনির কথায় ফিরি।
এবারে ওকে জিজ্ঞেস করলাম - “কেন মেয়ে চাস? ”
উত্তর এল - “মেয়ে হলে অনেক কম খরচা। ”
এবার আমার অবাক হওয়ার পালা।
বললাম - “কোথায়? উল্টে তো সব জায়গায় লোকে এটাই বলে যে মেয়ে হলে খরচা বেশি বিয়ে দিতে । ”
রনি চুপ খানিকক্ষন।  বেশ জুত করে একটা তন্দুরী চিকেনের পিস তুলে নিয়ে আয়েশ করে সেটা খেতে খেতে বলল - ”সে তো অনেক পরের ব্যাপার, কিন্তু এখন, এই মুহুর্তে ছেলে হলে খরচা বেশি। ”
আমি জিজ্ঞেস করলাম - “কিকরে?”
রনি বলে চলল - “ হিজড়ারা ছেলে হলে ২৫ হাজার নেয়, মেয়ে হলে নেয় ১০-১৫ হাজার।  এছাড়াও হসপিটালের নার্স থেকে কাজের মাসি সবাই মেয়ে হলে কম টাকা চাইবে।
এছাড়া পৈতের অনুষ্ঠান করার দরকার পড়বে না।
তারপর ধরো অন্নপ্রাশনে লোকজনদের বাদ দিতে সুবিধে হবে।  এই ধরো আজ থেকে ৬ মাস পরে এই তোমাকেই চোখ ছলছল করে, গলা কাপিয়ে বলব যে সৈকতদা, বোঝোই তো, মেয়ে হলে কতো খরচা করতে হবে বিয়েতে, তাই আর এই অন্নপ্রাশনের মত ছোটখাট অনুষ্ঠানে আর তোমাকে ডেকে কষ্ট দিলাম না।  এটা শুনলে কি তুমি আর খারাপ পাবে বল ?
তাই হিসেব করে দেখলাম সব মিলিয়ে মেয়ে হলে নেট সেভিংস অনেক বেশি হবে।  তাই আমি মেয়েই চাই। ”
মেয়ে সন্তান চাওয়ার যে এরকম কারণ থাকতে পারে, বাপের জন্মে তা আন্দাজ করতে পারিনি।
খ্যাক খ্যাক করে সবাই হাসলাম। হাসি আর থামছিলই না আমাদের।
কিন্তু হাসতে হাসতে এটাও মনে হল যদি দেশের লোকজন, বিশেষত হিন্দিবলয়ের লোকেরা যদি এই রনির মতো করেই একটু ভাবতে পারত, তাহলে আজকে দেশে ছেলে মেয়েদের অনুপাত দেখতে বসলে লজ্জা পেতে হত না কিম্বা আমির খান কে সত্যমেব জয়তে তে ভ্রুণহত্যা নিয়ে এক ঘন্টার প্রোগ্রাম করতে হত না। 
হায় রে অভাগা দেশ, কবে যে আমরা মানুষ হব!!

Friday 9 June 2017

#A tryst with 'Them '#

Let me share a real life unworldly experience in Itachuna Rajbari (about 100 Kms from Kolkata).

It took almost 4 hours to reach Itachuna Rajbari, courtesy some goof up on my behalf. Tired & exhausted, when finally  I checked in to my room in afternoon, the AC was running in full swing.

After lunch, there was a short tour around the house. This was followed by evening puja & some excellent songs played by a local flute player. All in all a cool experience.

Then came the dinner. The food was excellent - a unique combination of prawn, mutton, pulao, couple of veg dish , followed by payas & sweets. Definitely better than any 5 star. 

After dinner when I went back to my room at night, the AC wasn't working. I called in at the reception & they sent a person to look into the AC. However it still didn't work & we decided to put off the AC switch & open the windows ( well the window is actually bigger than any door in our current apartment), but I agreed reluctantly. Then I slept.

And then the fun started. Suddenly I woke up in the middle of the night feeling extremely cold. I was surprised to see the AC working again. I got down from bed to switch off the AC ( I didn't have any remote), but hey the switch is already off. I couldn't fathom what to do, didn't know how to turn off the AC & cursed my luck , the AC , the rajbari management (silently) & went back to sleep with a rug. 

But then I discovered something else is missing. It's my side pillow !!! I clearly remembered having it when going to sleep but it's not there. I started looking for it & there it is , under my bed . Well, with the mosquito net on, I must have kicked it extremely hard for it to be there!!! Feeling sleepy & refusing to believe anything nonsense I went back to bed & fell asleep.

No further incident at night . Only when I woke up in the morning, the pillow was agains missing & now it is lying in front of the sofa. 

Btw, I didn't have a single drop of alcohol last night. So I was even more perplexed. When the service boy came to provide me the morning tea & biscuits, I asked him about the incident. Initially he was reluctant to entertain my qs. But then after handing a 10 Rupee note, he said that 'These things' happen here. But 'They' are harmless. Then he asked whether I heard anything , I said no . Then the guy mentioned that at night people have often heard  noises of some one moving furnitures . I asked but it's only the roof on top of my roon. Then the guy stated that 'They' roam in the roof at night, that's why the noise.

The entire episode was perplexing. My logical mind refusing to acknowledge the co-existence of 'Them' , but then who did play football with my pillow in the room at night? That's still something which my logical mind failed to answer . 

Saturday 3 June 2017

অদ্ভুতুরে অভিজ্ঞতা

গতকাল একটি জমিদার বাড়িতে বেড়াতে গেছিলাম - ইটাচুনা রাজবাড়ি।
সেখানে একটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হল।
দুপুরে পৌছে যখন ঘরে ঢুকলাম, তখন ঘরে বেশ গাঁ গাঁ করে এসি চলছিল।
রাতে ঘুমোতে গিয়ে দেখলাম এসি কাজ করছে না। খবর দিলাম রিসেপশনে।  একজন এসে দেখেও গেল, কিন্তু কিছু করতে পারল না। বলল খারাপ হয়ে গেছে, কালকে মিস্ত্রি এসে ঠিক করে দেবে।

রাতে গল্প টল্প করে বালিশ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি কখন খেয়াল করিনি, হঠাৎ মাঝ রাত্রে প্রচন্ড ঠান্ডায়  ঘুম ভেঙে গেল।  দেখলাম এসি  কিন্তু জোরে আওয়াজ করে চলছে।  একটু খটকা লাগল, এসির সুইচ তো আমি চালাইনি, তো কিকরে চলল ? লাইট জালিয়ে দেখলাম এসির সুইচ কিন্তু বন্ধই।  ঘাবড়ে গেলাম বেশ।  কিরকম হল এটা? এসির সুইচ বন্ধ কিন্তু এসি চলছে।
যাই হোক, মনকে বোঝালাম মেকানিকাল ডিফেক্ট, এই ভেবে বিছানায় উঠতে যাব, দেখি বালিশ টাও হাওয়া।
আমি পাশ বালিশ ছাড়া ঘুমতে পারি না, ছোটোবেলাকার অভ্যেস, তো কোথায় গেল বালিশ? খুজতে খুজতে দেখি বিছানার তলায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।

সেকিরে বাওয়া? ফুটবল খেলছিলাম নাকি শুয়ে? যাই হোক পাশবালিশ টা উঠিয়ে আবার শুলাম।
রাতে আর কিছু হয়নি।  সকালে উঠে দেখি আবার পাশবালিশ টা আবার নেই।  খোজ করতে গিয়ে দেখলাম বালিশ টা দূরে সোফার সামনে পড়ে আছে।

মাথা কাজ করছিল না।  সকালে যিনি চা বিস্কুট দিতে ঘরে আসেন, তাকে জিজ্ঞেস করলাম।
প্রথমে কিছু বলতে চাইল না। হাতে ১০ টাকার নোট ধরাতে বলল যে এখানে এরকম নাকি হয়।  তেনারা আছেন, কারোর ক্ষতি করেন না, নিজেদের মনে ঘুরে বেড়ায়।  আরো বলল যে মাঝরাতে নাকি অনেকসময় ফার্নিচার টানাটানি করার শব্দ শোনা যায় রাতে।  কিন্তু ওপরে তো ছাদ. তাহলে?

উত্তর এল - ওই আর কি? ওনারা একটু ছাদে হেটে বেড়ান, তাই আর কি শব্দ হয়।
কি বলব ভেবে পেলাম না. শুধু বুঝলাম না ওনারা সব ছেড়ে আমার পাশবালিশ টা কে নিয়ে কেন মাঝরাতে টানাটানি করলেন?