Thursday, 6 July 2017

বোকাবাক্সের হরেকরকম

আমি টিভিখোর। সুযোগ পেলেই চট করে টিভির সামনে বসে পড়ি।

ভুল বললাম। বসতাম। ৭ বছর আগে, এখন নয়।
বা বসলেও নিজের পছন্দের কিছু দেখতে বসি না। এখন টিভিতে একটাই প্রোগ্রাম চলে বাড়িতে, সেটা হল নানাবিধ কার্টুন।  যখনি বসি, ওগুলোই দেখি বা দেখতে বাধ‍্য হই। কোন উপায় নেই।

যাই হোক, ভগবান বলে কোন এক ভদ্রলোক নিশ্চয় ঘাপটি মেরে কোথাও বসে বসে আমার ওপর হয়ে চলা এই নিরন্তর অত্যাচার দেখে মজা লোটেন। কখনো সখনো ক্লান্ত হয়ে অবশ‍্য আমায় সুযোগ করে দেন যাতে কার্টুন ছাড়াও অন্য কিছু দেখতে পাই।

তো আজ এরকমই একটা দিন ছিল। বড়টা স্কুলে গেছে, ছোটটা পরম নিশ্চিন্তে যোগনিদ্রায় রত, এরকম এক মহাসময়ে আমি সেই ভগবান ভদ্রলোকটিকে 'থ্যাংকু', 'শুক্রিয়া', 'আরিগাতোগোজাইমাসিতো',  'ডাঙ্কে' ইত্যাদি ইত্যাদি নানান ভাষায় ধন্যবাদজ্ঞাপন করে বেশ জুত করে টিভি খুলে বসলাম।

মনে পড়ে গেল স্কুলের সময়কার কথা। খন হয় টিভি খুলে লুকিয়ে এফ টিভি দেখতাম, কিংবা শক্তিমান দেখতাম দূরদর্শনে।

সে যাই হোক এখন বয়স হয়েছে। বেশি নয়, তাও হয়েছে তো! এমনি এমনি তো আর চুল পাকেনি বা দুই সন্তানের পিতৃত্ব লাভ করিনি। তাই আর আগেকার মত এফ টিভি খোলার চেষ্টা করলাম না। সত্যি বলতে কি চ্যানেলটা এখন আছে কিনা, সেটাও জানি না।

তো মোদ্দা কথায় আসি। প্রথমেই একটা বাংলা চ্যানেল খুললাম ঘুরিয়ে ফিরিয়ে।

স্টার জলসা - একটা সিরিয়াল হচ্ছিল, নাম জানি না, জানতে চাইও না। এককালে  জননী, জন্মভূমি এই সিরিয়াল গুলো ঠাকুমার সাথে বসে দেখতাম। তো ভাবলাম দেখি এই সিরিয়ালটা কেমন?
ভুল, ভুল । সিদ্ধান্তটা যে একদম ঐতিহাসিক ভুল ছিল, তা একটু পরেই বুঝলাম।
গল্প টা যেটুকু বোঝা গেল, তা হল এক শহুরে, নামজাদা চিকিৎসক পাকে চক্রে একটি গ্রাম‍্য , সহজসরল মেয়েকে বিয়ে করেছে। কিন্তু সেই বউটি তার পরম ভালোবাসার বরকে অন‍্য একটি মহিলার সাথে বিয়ে দিয়ে আত্মবলিদান করতে বদ্ধপরিকর কারণ ওই মহিলার হবু স্বামী সেই অভাগা ডাক্তার বরটির চিকিৎসায় মারা গেছে।
তা কুকুরের পেটে যেমন ঘি সহ্য হয়না, তেমনি আমার মত পাপিষ্ঠের পক্ষেও এই মহানতা আত্মস্থ করা সম্ভব হলনা। কেউ প্ল্যানচেট করতে পারলে জানাবেন, গান্ধীজি, বিদ্যাসাগর মশাই কিম্বা রাজা হরিশ্চন্দ্র হয়ত এই সিরিয়ালটা দেখলে কিছুটা শিক্ষালাভ করতে পারবেন।

সুতরাং রিমোটে চ্যানেল ঘোরালাম।

সিনেমার একটা চ্যানেলে - সেটম‍্যাক্সে অমিতাভ বচ্চনের অস্কারজয়ী সূর্যবংশম দেখচ্ছিল। শুনেছি এই চ্যানেলে ২টোই প্রোগ্রাম দেখায় - আইপিএল আর সূর্যবংশম। তা এই সিনেমাটা এককালে আধা অবধি দেখে সারাদিন হেঁচকি তুলেছিলাম। আর কোনমতেই সেই অভিজ্ঞতা চাই না ‌। তাই হ‍্যাচোরপ‍্যাচোর করে তৎক্ষণাৎ চ্যানেলটা বদল করলাম।

পরের চ্যানেলটায় দেখলাম আমাদের এক মহানায়ক কাম বিধায়ক মশাই নেচে গেয়ে গান করছেন, সাথে আবার দুষ্টের দমনও করছেন একিসাথে। সিনেমাটার নাম বোধহয় পাগলু২।
আহা, জল চলে এল চোখে. কিন্তু ওই আর কি, বেশি জল পড়লে আবার ডিহাইড্রেশন না হয়ে যায়, সেই ভয়ে পরের চ্যানেলটা চালিয়ে দেখি আমাদের 'চন্দননগরের মাল' তাপসদা আর 'বেল্ট কাকু' রঞ্জিত মল্লিক নিজেদের মধ্যে উচ্চকিত ভাবে চোখা চোখা বক্তব্য রাখছেন।
কার পক্ষ নেব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। একেই মনে হয় বলে ডাঙ্গায় বাঘ আর জলে কুমীর। তাপসদা কে সাপোর্ট করলে গায়ের মধ্যে ঝপাং ঝপাং করে বেল্টের বাড়ি পড়ার প্রবল সম্ভাবনা। আর মালদার বিপক্ষে গেলে তো ঘরে ছেলে ঢুকে পড়বে !!!
কি দরকার রে ভাই এত ঝামেলায় জড়িয়ে !! ভয়ে কাপতে কাপতে তাপসদা আর রঞ্জিত কাকুর রক্তচক্ষু এড়িয়ে চ্যানেল বদলালাম।

পরের গন্তব্য - স্টার স্পোর্টস
তা সেখানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালের রেকর্ডিং চলছিল।
বুমরাহর নো বল টা আবার দেখার সৌভাগ্য হল। কিন্তু জেনেশুনে বিষপান করার জন্যে অনেক সময় আছে ভবিষ্যতে, এই ভেবে রিমোট চাপতেই শরীরটা ব্যাথা করে উঠল।
কারণটা আর কিছুই নয়, ওখানে ডব্লু ডব্লু এফের খেলা চলছিল। এই খেলাটা আমার দেখতে অতটাই ভাল্লাগে যতটা ভাল্লাগে কাজের মাসিদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়াগুলো শুনতে।
যাই হোক , নিজের শরীরের কথা ভেবে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত চিত্তে এই অত‍্যন্ত ভাললাগার খেলাটা দেখার থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম।
পরের চ্যানেলটায় চলছিল গল্ফ। কখন হোলে বল পড়বে, তার জন্যে বসে থাকলে তো কলিযুগ পেড়িয়ে সত‍্যযুগ এসে পড়বে।
তাই আর বিন্দুমাত্র কালবিলম্ব না করে চলে গেলাম সংবাদের চ্যানেল গুলোয়।

সংবাদের চ্যানেলগুলোর মধ্যে এনডিটিভি আমার সবচেয়ে পছন্দের ছিল এককালে। সেই ওয়ার্ল্ড দিস উইক' এর সময় থেকেই প্রণয় রায়কে বেশ ভাললাগত। তা সেই এনডিটিভি খুলতেই দেখলাম বেশ কিছু দাড়িওয়ালা বোদ্ধা টাইপের লোকজন বসে বেশ গুরুগম্ভীর আলোচনা করছেন।
খানিক্ষন বাদে বুঝলাম তারা জনৈক পশুপ্রেমীদের নিয়ে কথা বলছেন। আরো জানলাম যে সেই পশুপ্রেমীরা বেশ রবিনহুডের মতন। তারা পশু বাচাতে মানুষ মেরে দেয়। আরেব্বাস !!! গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো।
এরা তো তাহলে একদম যাকে বলে বিবেকানন্দের ভাব শিষ্য। 'জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর'। তবে তা করতে গিয়ে কয়েকটি মানুষই তো মেরেছে মাত্র, কি আর এমন দোষ!
আমি আবার পশুপ্রেমীদের হেব্বি ফ‍্যান ছিলাম একসময়।
তাই তাদের গালমন্দ করলে আমি খুব দুঃখ পাই।
কি আর করি, মনে এক রাশ দুঃখ নিয়ে পরের চ্যানেলে যেতেই মনে হল যেন ভূমিকম্প হল।

চেয়ার থেকে পড়েই যেতাম। কোনমতে হাতল টাতল ধরে সামলে উঠে দেখলাম যে কালো স্যুট পড়া, চশমা পরিহিত এক ভদ্রলোকের গলা থেকে এই ভূমিকম্প উদ্রেককারী আওয়াজ খানা বেরোচ্ছে।
সুকুমার রায়ের কবিতাখানি মনে পড়ে গেল -
' ভীষন রবে গান ধরেছে ভীষ্মোলোচন শর্মা, আওয়াজ খানা দিচ্ছে হানা দিল্লি থেকে বর্মা।'

একটু পরে বুঝলাম যে চ‍্যানেলটি হল রিপাবলিক টিভি আর সেই সঞ্চালক মশাই হলেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী অর্ণব গোস্বামী। বাজখাঁই গলায় কাকে যেন ধমকাচ্ছিলেন গোস্বামীবাবু।
ভাল করে শুনতে বুঝলাম সেই লোকটি, যিনি ধমক খাচ্ছিলেন, তিনি কিছু অতীব নির্বিরোধী, শান্তিকামী মানুষদের শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের সমর্থন করছিলেন বলেই ধমক খেয়ে চমকে চমকে উঠছিলেন।
তা হয়েছিল কি, একটি কিশোর বালক নাকি একটি মুখপুস্তকে সর্বধর্ম সমন্বয় টাইপের একটি শান্তির বাণী ছেড়েছিল। সেই বাণী পড়ে কিছু ঘোরতর নির্বিরোধী, শান্তিকামী মানুষ নাকি এতই আনন্দিত হয়েছিলেন যে তাঁরা আবদার জুড়েছিলেন যে সেই কিশোরটির সাথে পাথর ছুড়ে ছুড়ে ডাংগুলি খেলবেন। কিন্তু ওনাদের সেই আবদার না মানায় ওনারা তার পরিবর্তে কিছু অত‍্যন্ত গঠনমূলক কাজে নিজেদের লিপ্ত করেন - এই যেমন ঘরবাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, সাধারণ লোকজন কে আদর করে তাদের হাত-পা-মাথা ফাটিয়ে দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
ওই আর কি, আগেই বলেছি বয়সের ভারে জর্জরিত আমি, তাই আমার মস্তিষ্কের প্রোসেসরটা আগের মত অত সক্ষম নয়। এত কিছু তথ্য প্রোসেস করতে গিয়ে মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছিল।
কোনমতে মুখে - মাথায় জলটল ছিটিয়ে আবার রিমোট টিপলাম।

সামনে দেখি ডিজনি চ্যানেল। সেখানে চলছে টম এন্ড জেরির কার্টুন। আদি অনন্তকাল যাবৎ চিনি এদেরকে। একটি বিচ্ছু বিড়াল আর একটি ততোধিক বিচ্ছু ইদূরের নিজেদের মধ্যে লাভ-হেট রিলেশনশিপের কাহিনি। সারাক্ষণ মারামারি করে কিন্তু তারি মধ্যে ওরা কিন্তু একে অপরকে ভালোওবাসে, কেউ কাউকে ছাড়া থাকতেও পারে না.
দেখতে দেখতে মনে হল এই কার্টুনই তো ভাল। যেখানেই তাকাই সর্বত্রই তো এই কার্টুনগিরির খবরই দেখি।

ইন্ডিয়া পাকিস্তানি হোক বা ঘটি বাঙ্গালই হোক বা  হিন্দু মুসলমানই হোক সর্বত্রই এই টম এন্ড জেরির গল্পই চলছে। মারামারিও করব আবার কেউ কাউকে ছাড়া থাকতেও পারব না।
ভাবুন তো একটা সমাজ যেখানে কোন একটি বিশেষ গ্রুপ আর নেই। আরে বাবা ঝগড়া করতেও তো পার্টনার লাগে, তাই না?

যাই হোক, শেষে বুঝলাম যে আমাদের দুনিয়াটাই যেখানে কার্টুন , তখন কার্টুন চ‍্যানেল দেখাই শ্রেয়।
তাই শেষ অবধি ডিজনি চ্যানেলটাই দেখলাম।

হরেক রকমের কার্টুন হল - টম এন্ড জেরি, ডোরেমন, মিকি ডোনাল্ড। প্রাণ খুলে হাসলাম, একদম নির্মল আনন্দ উপভোগ যাকে বলে।
কারোর চাপে নয়, একদম নিজের ইচ্ছায়। আরো চাইলাম যে আমার সন্তান যেন চিরটাকাল ‌এরকম কার্টুন দেখেই নির্মল আনন্দ পেতে পারে।

Monday, 26 June 2017

ঈদোৎসবের ভিআইপি

ঈদের সকাল।
আগের দিনই নেমন্তন্ন চলে এসেছে শাজাহানদার বাড়ি থেকে ।
শাজাহানদা আমার গাড়িচালক। তবে সত্যি কথা বলতে কি, ভদ্রলোক তার সাথে সাথে আমার গার্জেনগিরিও করে থাকেন সময়ে অসময়ে। আমাকে ভাই বলে ডাকে, আমার মা কেও মা বলেই ডাকে ।

তো সেই শাজাহানদার জীবনচরিত লিখতে বসলে মোটামুটি হলিউড না হলেও একটা বলিউডের সিনেমা তো বনেই যাবে।

খুব সংক্ষেপে সারি। ভদ্রলোক মুম্বতে গিয়ে হিরো হতে গিয়ে ফিরে এসেছিল টাকার অভাবে, তারপর সিপিএম এর গুন্ডা হয়ে বেশ কিছু খুনটুন করে জেল খেটে বেড়িয়ে এসে কিছুদিন পুলিশের সোর্স হয়ে কাজ করে অবশেষে এখন আমার গাড়িচালক প্লাস গার্জেন।

তো আগে যাই হোক, বিগত ৫ বছর ধরে শাজাহানদাকে দেখছি। প্রচন্ড ইমানদারি নিয়ে কাজ করা, সব ধর্ম মেনে চলা এক মানুষ। সত‍্যিকারের সেক্যুলার লোক, সেক্যুলারিজমের  মুখোশ পড়া ভন্ড দেখনদারীওয়ালা নয়। শাজাহানদার  সব ধর্ম মেনে চলার গল্পটা অন্য আরেকদিন বলবো, যথাসময়ে । আপাতত কালকের ঘটনাটাই বলি।

ঈদের নেমন্তন্ন যখন, তখন সাদা পাঞ্জাবি পড়ে যাওয়াটাই রেয়াজ সর্বত্র। কিন্তু আমার আবার রেয়াজ না মানাই অভ্যেস। তো সেই অভ্যেস মতই বেশ একটা লাল নীল সবুজ হলুদয়ালা রং বেরং এর টি-শার্ট পড়ে গেলাম শাজাহানদার বাড়ির লাগোয়া মসজিদের সামনে।

আমার পোশাক দেখে ওখানকার অনেকেই বেশ বাঁকা চোখে তাকাচ্ছে আমার দিকে, আর আমি বেশ নির্বিকার চিত্তে ঢিনচ্যাক পূজা আর হানি সিং এর গান শুনে, তার তুলনামূলক শাস্ত্রীয় বিশ্লেষণ করে সময় অতিবাহিত করছি। হঠাৎ  দেখি সামনে বেশ সাজো সাজো রব উঠেছে। তাকিয়ে দেখি একটা বেশ বড় কনভয় এসে দাড়িয়েছে। ভেতর থেকে নেমে এসেছেন জনৈক দাপুটে মন্ত্রী। সাথে বেশ কিছু ষন্ডামন্ডা দেহরক্ষী। তা তেনারা এসেই আমাদের মত আম জনতা কে ছত্রভঙ্গ করতে লেগে গেলেন।

আমিও সরে দাড়ালাম। স্বাভাবিক ভাবেই মসজিদের ভেতর থেকে দাপুটে মন্ত্রীবর কে অভ্যর্থনা জানাতে লোকজন বেড়িয়ে আসছে, হঠাৎ দেখি শাজাহানদাও বেড়িয়ে এল।

তা মন্ত্রীবাবু বেশ শাহরুখ খানের কায়দায় সবার সাথে হাত মিলিয়ে জাপ্টাজাপ্টি করছেন, কিন্তু শাজাহানদা দেখলাম কোনো দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ওনার সামনে দিয়েই বেড়িয়ে এল।

মন্ত্রীমশাই একটু অবাকই হলেন মনে হল। ওনার পাশে আবার ছিল আমাদের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি তো বেশ রাগত ভাবেই পাশের এক বৃদ্ধ কে জিজ্ঞেস করলেন যে কে এই বেয়াদব লোক? বৃদ্ধের উত্তর শোনার আগেই অবশ্য শাজাহানদা আমায় পাকড়াও করে ফেলেছে। আর তারপর প্রায় চ্যাংদোলা করে বস্তির মধ্যে ঢুকিয়ে তার বাড়ি নিয়ে চলে গেছে।

একটু পরে মন্ত্রী মশাইও তার সিপাহী দের নিয়ে বস্তিতে ঢুকলেন।

সেখানেও সবাইকে দেখে তিনি একগাল হাসি হেসে 'ঈদ মোবারক', 'সালাম আলেইকুম' করে অনেককেই জড়িয়ে ধরে হামি টামি খেলেন।
একটু পরে শাজাহানদার বাড়ির সামনে এসেও অমায়িক হাসির সাথে কুশল বিনিময় হল। হঠাৎ ওনার চোখ গেল আমার দিকে।

মুশকিল হল এই মন্ত্রীমশাইকে আমি পারিবারিক সূত্রে ভালই চিনি আর উনিও আমায় অল্পসল্প চেনেন । তাতে অবশ‍্য কোনই অসুবিধে নেই।

অসুবিধেটা‌ শুধু এই যে ওনার সামনেই শাজাহানদার বাড়ির লোকজন ওনার পরিচিত একজন আম আদমিকে সেমাই পায়েস পরিবেশন করলেন আর মন্ত্রীমশাই বা সেই কাউন্সিলর মশাইকে দেখে মাথা হেলিয়ে শুকনো অভিবাদন জানালেন।

বিশ্বাস করবেন না, সেই সময়ে কেউ যদি আমায় নিজের নাম জিজ্ঞেস করত, তো নির্ঘাত নরেন্দ্র মোদি বা প্রণব মুখার্জি বলতাম হয়ত, নিজেকে এরকম ভিভিআইপি কোন দিনও মনে হয়নি আগে।

আর শুধু যে শাজাহানদার বাড়ির লোকজন আমায় এত খাতিরদারি করল তাও নয়, চারপাশের আরো কত না চেনা, না জানা মানুষেরা এসে আমার সাথে হরেক কিসিমের গল্প করে গেল।
সেমাই তো খেলামি, সাথে ২ রকমের সরবত, বিরিয়ানি , মাছ , মাংস আরো কত কি !!!

ধর্মীয় বিভাজন, মৌলবাদ ইত‍্যাদি ইত‍্যাদি যা দেখেছি সবই ভার্চুয়াল ফেবুর কল্যাণে, কিন্তু বাস্তবে ঈদের দিনে একটি মুসলমান বস্তিতে গিয়ে অনেকটা ভালবাসাই পেলাম, সাথে আশীর্বাদও।

এও দেখলাম যে সংখ্যালঘু তোষণকারী কোন এক দলের কোন এক দাপুটে মন্ত্রীর চাইতে কিন্তু অনেক বেশি আন্তরিকতা বরাদ্দ ছিল একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন অজানা, অচেনা হিন্দু ছেলের প্রতি।

জয় হিন্দ ।

Wednesday, 21 June 2017

#মেয়ে চাই#

“আমি মেয়ে চাই !”
কথা হচ্ছিল রনির সাথে। রনি আমার অফিসের কলিগ।  সবেতেই সে একদম যাকে বলে স্টার।  প্রোগ্রামিংই হোক, ক্লায়েন্টকে টুপি পরিয়ে কাজ আদায় করাই হোক, বস কে তেল মারাতেই হোক, জুনিয়রদের থেকে তেল খাওয়াই হোক বা মহিলাদের মন জয় করাই হোক সবেতেই সে এক নম্বর।
তবে যেটা সবচাইতে ও ভাল করে, তা হল গল্প বলা।  ওর গল্পের গরু গাছে নয়, একদম মহাকাশে উঠে যায়।  সে যাক, কিন্তু ব্যাপার হল যে সেই রনি এবারে বিবাহিত জীবনেও ছক্কা হাকিয়েছে, মানে ওই আর কি, বাবা হতে চলেছে।
সেই প্রসংগেই একদিন সেক্টর ফাইভের একটা রেস্তোরাতে বসে কথা হচ্ছিল রনির সাথে।  তখনি ওকে জিজ্ঞেস করলাম - “কিরে কি চাস ? ছেলে না মেয়ে? ”
আজকাল সবাই এতে ডিপ্লোম্যাটিক উত্তর দেয় - “যা হবে, তাই ভাল” ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু আমাদের রনির পেটে তখন তিন পেগ বিয়ার ঢুকে আছে , জানি এই সময় ডিপ্লোমেসি বেরোবে না মুখ থেকে ।  ঠিক তাই হল। 
সহজ সরল স্বীকারোক্তি বেরোল - “আমি মেয়ে চাই !”
তা বেশ ভাল।  আমিও এককালে মেয়ে সন্তান ছেয়েছিলাম, পাইনি, তাই এখনো ইয়ে মানে হাল ছাড়িনি ।  যাই হোক, সে কথা পরে হবে, আপাতত রনির কথায় ফিরি।
এবারে ওকে জিজ্ঞেস করলাম - “কেন মেয়ে চাস? ”
উত্তর এল - “মেয়ে হলে অনেক কম খরচা। ”
এবার আমার অবাক হওয়ার পালা।
বললাম - “কোথায়? উল্টে তো সব জায়গায় লোকে এটাই বলে যে মেয়ে হলে খরচা বেশি বিয়ে দিতে । ”
রনি চুপ খানিকক্ষন।  বেশ জুত করে একটা তন্দুরী চিকেনের পিস তুলে নিয়ে আয়েশ করে সেটা খেতে খেতে বলল - ”সে তো অনেক পরের ব্যাপার, কিন্তু এখন, এই মুহুর্তে ছেলে হলে খরচা বেশি। ”
আমি জিজ্ঞেস করলাম - “কিকরে?”
রনি বলে চলল - “ হিজড়ারা ছেলে হলে ২৫ হাজার নেয়, মেয়ে হলে নেয় ১০-১৫ হাজার।  এছাড়াও হসপিটালের নার্স থেকে কাজের মাসি সবাই মেয়ে হলে কম টাকা চাইবে।
এছাড়া পৈতের অনুষ্ঠান করার দরকার পড়বে না।
তারপর ধরো অন্নপ্রাশনে লোকজনদের বাদ দিতে সুবিধে হবে।  এই ধরো আজ থেকে ৬ মাস পরে এই তোমাকেই চোখ ছলছল করে, গলা কাপিয়ে বলব যে সৈকতদা, বোঝোই তো, মেয়ে হলে কতো খরচা করতে হবে বিয়েতে, তাই আর এই অন্নপ্রাশনের মত ছোটখাট অনুষ্ঠানে আর তোমাকে ডেকে কষ্ট দিলাম না।  এটা শুনলে কি তুমি আর খারাপ পাবে বল ?
তাই হিসেব করে দেখলাম সব মিলিয়ে মেয়ে হলে নেট সেভিংস অনেক বেশি হবে।  তাই আমি মেয়েই চাই। ”
মেয়ে সন্তান চাওয়ার যে এরকম কারণ থাকতে পারে, বাপের জন্মে তা আন্দাজ করতে পারিনি।
খ্যাক খ্যাক করে সবাই হাসলাম। হাসি আর থামছিলই না আমাদের।
কিন্তু হাসতে হাসতে এটাও মনে হল যদি দেশের লোকজন, বিশেষত হিন্দিবলয়ের লোকেরা যদি এই রনির মতো করেই একটু ভাবতে পারত, তাহলে আজকে দেশে ছেলে মেয়েদের অনুপাত দেখতে বসলে লজ্জা পেতে হত না কিম্বা আমির খান কে সত্যমেব জয়তে তে ভ্রুণহত্যা নিয়ে এক ঘন্টার প্রোগ্রাম করতে হত না। 
হায় রে অভাগা দেশ, কবে যে আমরা মানুষ হব!!

Friday, 9 June 2017

#A tryst with 'Them '#

Let me share a real life unworldly experience in Itachuna Rajbari (about 100 Kms from Kolkata).

It took almost 4 hours to reach Itachuna Rajbari, courtesy some goof up on my behalf. Tired & exhausted, when finally  I checked in to my room in afternoon, the AC was running in full swing.

After lunch, there was a short tour around the house. This was followed by evening puja & some excellent songs played by a local flute player. All in all a cool experience.

Then came the dinner. The food was excellent - a unique combination of prawn, mutton, pulao, couple of veg dish , followed by payas & sweets. Definitely better than any 5 star. 

After dinner when I went back to my room at night, the AC wasn't working. I called in at the reception & they sent a person to look into the AC. However it still didn't work & we decided to put off the AC switch & open the windows ( well the window is actually bigger than any door in our current apartment), but I agreed reluctantly. Then I slept.

And then the fun started. Suddenly I woke up in the middle of the night feeling extremely cold. I was surprised to see the AC working again. I got down from bed to switch off the AC ( I didn't have any remote), but hey the switch is already off. I couldn't fathom what to do, didn't know how to turn off the AC & cursed my luck , the AC , the rajbari management (silently) & went back to sleep with a rug. 

But then I discovered something else is missing. It's my side pillow !!! I clearly remembered having it when going to sleep but it's not there. I started looking for it & there it is , under my bed . Well, with the mosquito net on, I must have kicked it extremely hard for it to be there!!! Feeling sleepy & refusing to believe anything nonsense I went back to bed & fell asleep.

No further incident at night . Only when I woke up in the morning, the pillow was agains missing & now it is lying in front of the sofa. 

Btw, I didn't have a single drop of alcohol last night. So I was even more perplexed. When the service boy came to provide me the morning tea & biscuits, I asked him about the incident. Initially he was reluctant to entertain my qs. But then after handing a 10 Rupee note, he said that 'These things' happen here. But 'They' are harmless. Then he asked whether I heard anything , I said no . Then the guy mentioned that at night people have often heard  noises of some one moving furnitures . I asked but it's only the roof on top of my roon. Then the guy stated that 'They' roam in the roof at night, that's why the noise.

The entire episode was perplexing. My logical mind refusing to acknowledge the co-existence of 'Them' , but then who did play football with my pillow in the room at night? That's still something which my logical mind failed to answer . 

Saturday, 3 June 2017

অদ্ভুতুরে অভিজ্ঞতা

গতকাল একটি জমিদার বাড়িতে বেড়াতে গেছিলাম - ইটাচুনা রাজবাড়ি।
সেখানে একটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হল।
দুপুরে পৌছে যখন ঘরে ঢুকলাম, তখন ঘরে বেশ গাঁ গাঁ করে এসি চলছিল।
রাতে ঘুমোতে গিয়ে দেখলাম এসি কাজ করছে না। খবর দিলাম রিসেপশনে।  একজন এসে দেখেও গেল, কিন্তু কিছু করতে পারল না। বলল খারাপ হয়ে গেছে, কালকে মিস্ত্রি এসে ঠিক করে দেবে।

রাতে গল্প টল্প করে বালিশ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি কখন খেয়াল করিনি, হঠাৎ মাঝ রাত্রে প্রচন্ড ঠান্ডায়  ঘুম ভেঙে গেল।  দেখলাম এসি  কিন্তু জোরে আওয়াজ করে চলছে।  একটু খটকা লাগল, এসির সুইচ তো আমি চালাইনি, তো কিকরে চলল ? লাইট জালিয়ে দেখলাম এসির সুইচ কিন্তু বন্ধই।  ঘাবড়ে গেলাম বেশ।  কিরকম হল এটা? এসির সুইচ বন্ধ কিন্তু এসি চলছে।
যাই হোক, মনকে বোঝালাম মেকানিকাল ডিফেক্ট, এই ভেবে বিছানায় উঠতে যাব, দেখি বালিশ টাও হাওয়া।
আমি পাশ বালিশ ছাড়া ঘুমতে পারি না, ছোটোবেলাকার অভ্যেস, তো কোথায় গেল বালিশ? খুজতে খুজতে দেখি বিছানার তলায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।

সেকিরে বাওয়া? ফুটবল খেলছিলাম নাকি শুয়ে? যাই হোক পাশবালিশ টা উঠিয়ে আবার শুলাম।
রাতে আর কিছু হয়নি।  সকালে উঠে দেখি আবার পাশবালিশ টা আবার নেই।  খোজ করতে গিয়ে দেখলাম বালিশ টা দূরে সোফার সামনে পড়ে আছে।

মাথা কাজ করছিল না।  সকালে যিনি চা বিস্কুট দিতে ঘরে আসেন, তাকে জিজ্ঞেস করলাম।
প্রথমে কিছু বলতে চাইল না। হাতে ১০ টাকার নোট ধরাতে বলল যে এখানে এরকম নাকি হয়।  তেনারা আছেন, কারোর ক্ষতি করেন না, নিজেদের মনে ঘুরে বেড়ায়।  আরো বলল যে মাঝরাতে নাকি অনেকসময় ফার্নিচার টানাটানি করার শব্দ শোনা যায় রাতে।  কিন্তু ওপরে তো ছাদ. তাহলে?

উত্তর এল - ওই আর কি? ওনারা একটু ছাদে হেটে বেড়ান, তাই আর কি শব্দ হয়।
কি বলব ভেবে পেলাম না. শুধু বুঝলাম না ওনারা সব ছেড়ে আমার পাশবালিশ টা কে নিয়ে কেন মাঝরাতে টানাটানি করলেন?

Sunday, 30 April 2017

Bahubali 2 review

This review doesn't disclose the greatest ever secret...so you can safely continue

  Bahubali 2 is a magnum opus in true sense. Extravagance at it's best, the movie leaves no stones unturned to make it a perfect visual treat.
The frame is set on a magnanimous scale & on top of it is added extraordinary cinematography, great action sequences & mind-blogging vfx effects & you have to be in awe of the experience.
Also the marketing strategy of the movie will be a lesson to reckon for the future film makers. The 1st installment ended on a note triggering the greatest ever mystery as to why Katappa killed Bahubali. No wonder people flocked in numbers to watch the 2nd installment if not just to know the answer to the mystery.
The storyline was predictable albeit some twists. However the last 15 mins seem to have been made in haste just to complete the story line. Probably I would have loved the movie to be shorter with another sequel in the offing & given more space to the Mahendra Bahubali & his revenge story, rather than having it finished in last 15 mins .
    Prabhas & Anushka Shetty were spectacular , followed by some stellar performances by Ramya Krishnan, Satyaraj & Rana Daggubati. The performances were over the top & dramatic but you really can't expect a Nawazuddin style subtle perform in a larger than life magnum opus. So the drama actually added spice to the already spicy story.

   Verdict : Overall Bahubali 2 is an amazing experience & you have to watch it in large screens to feel it. However it might have been better if the movie had been released in 3d version but as of now the current 2d version works greatly to its favour.

Monday, 6 March 2017

স্যার

স্থান : একটি ট্রেইনিং ইনস্টিটউট ।
কথোপকথন চলছে একজন শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে ।
  শিক্ষক - "তোমার দ্বারা কিছু হবে না ।"
  ছাত্র চুপ ।
  শিক্ষক - " মাথায় কিছু ঢুকল ? "
  ছাত্র - " না স্যার। "
  শিক্ষক - " বুদ্ধিটা ব্যবহার করতে হয় !!  না করলে মরচে ধরে যাবে যে !! "
  ছাত্র চুপ ।
   শিক্ষক - " কাদের পাল্লায়  যে পড়েছি !!  তা কি করা হয় ? "
   ছাত্র - " স্যার, আই.টি তে কাজ করি। "
   শিক্ষক - " হ্যা, এই বুদ্ধি নিয়ে কোথায়েই বা আর যাবে ?  তা কোন কোম্পানী ? "
   ছাত্র কোম্পানীর নাম বলল।
   শিক্ষক (একটু দমে গিয়ে) -  "ও, ওখানে আমার কয়েকজন চেনাশোনা আছে । "
   ছাত্র (নিরীহ মুখ করে) - " জানি স্যার । "
   শিক্ষক (এবার সন্দিগ্ধ চোখে) - " কি জান ?"
   ছাত্র (একটু ঊশখুশ করে) - " আসলে স্যার, আপনার সিভিটা আমিই পেয়েছি।  কাল আপনার ইন্টারভিউ টা আমিই নেব ।"
   শিক্ষক (কাঁপা কাঁপা গলায়) - "অ্যাঁ স্যার, আ-আপনিই ? " 
   ঢোক গিললেন শিক্ষক
    শিক্ষক (ঘামতে ঘামতে) - "আ-আপনি খুব তাড়াতাড়ি শিখে নিচ্ছেন স্যার।  আর ২-৩ দিন প্র্যাকটিস করলেই আপনি একদম প্রোফেশনাল লেভেলে চলে যাবেন। "
   ছাত্র - "আপনি আমায় তুমি বলুন স্যার। "
   শিক্ষক - " না না। আমি আজ উঠি। তাহলে কাল একটু দেখবেন আমায় স্যার। হেঁহেঁহেঁ আপনাকে চিনতে না পেরে কি বলতে কি বলে দিয়েছি কিছু মনে করবেন না প্লিজ। "
   এই বলে তড়িঘড়ি শিক্ষকের প্রস্থান ।