Wednesday 21 June 2017

#মেয়ে চাই#

“আমি মেয়ে চাই !”
কথা হচ্ছিল রনির সাথে। রনি আমার অফিসের কলিগ।  সবেতেই সে একদম যাকে বলে স্টার।  প্রোগ্রামিংই হোক, ক্লায়েন্টকে টুপি পরিয়ে কাজ আদায় করাই হোক, বস কে তেল মারাতেই হোক, জুনিয়রদের থেকে তেল খাওয়াই হোক বা মহিলাদের মন জয় করাই হোক সবেতেই সে এক নম্বর।
তবে যেটা সবচাইতে ও ভাল করে, তা হল গল্প বলা।  ওর গল্পের গরু গাছে নয়, একদম মহাকাশে উঠে যায়।  সে যাক, কিন্তু ব্যাপার হল যে সেই রনি এবারে বিবাহিত জীবনেও ছক্কা হাকিয়েছে, মানে ওই আর কি, বাবা হতে চলেছে।
সেই প্রসংগেই একদিন সেক্টর ফাইভের একটা রেস্তোরাতে বসে কথা হচ্ছিল রনির সাথে।  তখনি ওকে জিজ্ঞেস করলাম - “কিরে কি চাস ? ছেলে না মেয়ে? ”
আজকাল সবাই এতে ডিপ্লোম্যাটিক উত্তর দেয় - “যা হবে, তাই ভাল” ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু আমাদের রনির পেটে তখন তিন পেগ বিয়ার ঢুকে আছে , জানি এই সময় ডিপ্লোমেসি বেরোবে না মুখ থেকে ।  ঠিক তাই হল। 
সহজ সরল স্বীকারোক্তি বেরোল - “আমি মেয়ে চাই !”
তা বেশ ভাল।  আমিও এককালে মেয়ে সন্তান ছেয়েছিলাম, পাইনি, তাই এখনো ইয়ে মানে হাল ছাড়িনি ।  যাই হোক, সে কথা পরে হবে, আপাতত রনির কথায় ফিরি।
এবারে ওকে জিজ্ঞেস করলাম - “কেন মেয়ে চাস? ”
উত্তর এল - “মেয়ে হলে অনেক কম খরচা। ”
এবার আমার অবাক হওয়ার পালা।
বললাম - “কোথায়? উল্টে তো সব জায়গায় লোকে এটাই বলে যে মেয়ে হলে খরচা বেশি বিয়ে দিতে । ”
রনি চুপ খানিকক্ষন।  বেশ জুত করে একটা তন্দুরী চিকেনের পিস তুলে নিয়ে আয়েশ করে সেটা খেতে খেতে বলল - ”সে তো অনেক পরের ব্যাপার, কিন্তু এখন, এই মুহুর্তে ছেলে হলে খরচা বেশি। ”
আমি জিজ্ঞেস করলাম - “কিকরে?”
রনি বলে চলল - “ হিজড়ারা ছেলে হলে ২৫ হাজার নেয়, মেয়ে হলে নেয় ১০-১৫ হাজার।  এছাড়াও হসপিটালের নার্স থেকে কাজের মাসি সবাই মেয়ে হলে কম টাকা চাইবে।
এছাড়া পৈতের অনুষ্ঠান করার দরকার পড়বে না।
তারপর ধরো অন্নপ্রাশনে লোকজনদের বাদ দিতে সুবিধে হবে।  এই ধরো আজ থেকে ৬ মাস পরে এই তোমাকেই চোখ ছলছল করে, গলা কাপিয়ে বলব যে সৈকতদা, বোঝোই তো, মেয়ে হলে কতো খরচা করতে হবে বিয়েতে, তাই আর এই অন্নপ্রাশনের মত ছোটখাট অনুষ্ঠানে আর তোমাকে ডেকে কষ্ট দিলাম না।  এটা শুনলে কি তুমি আর খারাপ পাবে বল ?
তাই হিসেব করে দেখলাম সব মিলিয়ে মেয়ে হলে নেট সেভিংস অনেক বেশি হবে।  তাই আমি মেয়েই চাই। ”
মেয়ে সন্তান চাওয়ার যে এরকম কারণ থাকতে পারে, বাপের জন্মে তা আন্দাজ করতে পারিনি।
খ্যাক খ্যাক করে সবাই হাসলাম। হাসি আর থামছিলই না আমাদের।
কিন্তু হাসতে হাসতে এটাও মনে হল যদি দেশের লোকজন, বিশেষত হিন্দিবলয়ের লোকেরা যদি এই রনির মতো করেই একটু ভাবতে পারত, তাহলে আজকে দেশে ছেলে মেয়েদের অনুপাত দেখতে বসলে লজ্জা পেতে হত না কিম্বা আমির খান কে সত্যমেব জয়তে তে ভ্রুণহত্যা নিয়ে এক ঘন্টার প্রোগ্রাম করতে হত না। 
হায় রে অভাগা দেশ, কবে যে আমরা মানুষ হব!!

No comments:

Post a Comment